Thursday, April 5, 2012

লালন ফকিরের কিছু গানের কলি


পথের পরিচয় করে
 

যাও না মনের সন্ধে মেরে
 

লাভ লোকসান বুদ্ধির ধারে
 

যাবে না



 
যেও না আন্দাজি পথে, মন রসনা


কুপঙ্কে কুপা পলে, প্রাণ বাঁচবে না।
 

অনুরাগ তরণী ছোড়ো
 

দাঁড় চিনে উজান ধরো
 

লালন বলে করতে পারো
 

মূল সাধনা



 
যার আপন খাবার আপনার হয় না।
 

লালন মরে জল পিপাসায়।
 

কাছে থাকতে নদী মেঘনা।





সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে।
এই পৃথিবী যেমন আছে তেমন ঠিক রবে।



এই দেশে মোর এই সুখ হোলো
আবার কথা যাই না জানি
পেয়েছি এক ভাঙা নৌকা
জনম গেলো সেচতে পানি।





এক রাজা যাই আর এক জন আসে
রাজ্যের তাইতে কি যায় আসে?


বহু তর্কে দিন বইয়ে যায়
বিশ্বাসে ধান নিকটে পাই।


মূল হারালাম লাভ করতে এসে
 

দিয়া ভাঙা নাই বোঝাই দেশে।
 

জনম ভাঙা নৌকা আমার
 

বাল ফুরালো জল সেঁচে।


পাড়ে কে যাবি নবীর নৌকাতে আয়
রু কাস্থের নৌকা খানি নাই ডুবার ভয়।
বেচারা নাইয়ে যারে
তুফানে যাবে মারা
এক ধাক্কায়।


আপন ঘরের হয় না খাবার
কি দেখতে যাও দিল্লী লাহোর
সিরাজ সাইন কয় লালন রে তোর
সাধাই মনের ঘর গেলো না।

চোখ থাকিতে হোলি কানা গুরু না বুঝে
আপনি রাজা আপনি প্রজা,
আপন দোষেই পাওগো সাজা,
আজিজ শাহ কয় হারুন পাগলা
প্রকৃতি প্রেমে থাকে না মাঝে।


যে লীলা ব্রাক্ষণদের উপর
সে লীলা এই বান্দা মাজার
হালে আপন জন্মের বিচার
সব জানতে পাই।
আপনার জন্ম লতা
জাঙাতার মূলতি কথা
লালন বলে পাবি সেথা
সাঁই পরিচয়।


বসত বাড়ীর ঝগড়া কেজো কিছুতে আর মিটলো না।
কার গোয়ালে কে দাই ধুঁনা, সব দেখি তা না না না না
ঘরের চোরে ঘর মারে যার,


বাসাতে সুখ হয় কিসে তার,


ভূতের কীর্তন যেমনি প্রকার,
 

তেমনি তার বসত খানা।


দেখে শুনে আত্মা 'লো,


কর্তা ভক্তি হতে হলো,


সাক্ষাতে ধন চুরি গেলো,
 

লজ্জা আর যাবে না।

 
ঘরের চোরে ঘর মারে যার,
বসতে সুখ হয় কিসে তার,
ভূতের কীর্তন যেমনি প্রকার,
তেমনি তার বসত খানা।
দেখে শুনে আত্মা কলো,
কর্তা ভক্তি হতে হলো,
সাক্ষাতে ধন চুরি গেলো,
লজ্জা তো আর গেলো না।
সর্ব জয় হাকিমের তরে,
আরজি করি বারে বারে,
লালন বলে সেও তো মোরে,
একবার ফিরে চাইলো না।


আপন ঘরে বোঝাই সোনা,
পাড়ে করে লেনা দেনা
ভাবে আমি হ্লাম জনম কানা,
না পাই দেখিতে।

করলি কতই পড়াশোনা
কাজে কামে ঝলসে কানা
কথায় তো চিরে ভিজে না
দুধ কিংবা ঝোল না দিলে।


না হলে মন সরল কি ফাল হবে কথা ধরে।
হাটে হাটে বেরাও মিছে তওবা পড়ে।
মক্কা যাবি মদিনা যাবি, ধাক্কা খাবি মন না মোরে।


চাতক স্বভাব না হইলে,
অমৃত মেঘের বারি
কথায় কি মেলে?


ছিলাম কোথা, এলাম হেথা,
যাবো কোথা, ভেবে মরি।


তুমি বা কার কেবা তোমার
 
ভব সংসারে?

মিছে মায়ায় মজিয়া মন
 
কি কর রে?


ভক্তির দ্বারে বান্ধা আছে সাঁই।
হিন্দু কি যবন বলে জাতের বিচার নাই।


লীলা দেখে লাগে ভয়


নৌকার উপর গঙা বোঝাই


ডাঙায় বইয়া যায়।


উজান ভেতেল পথ দুটি
দেল নয়ন করো খাঁটি
দাও যদি মন গোরা ভাটি
কুল পাবা না।


আশার সিন্ধু তীরে বসে আছি সদাই,
সাধু জোগালো চরণের ধূলো,
লাগবে কবে এই পাপীর গায়ে।


আমার ঘরের চাবি পরের হাতে
কেমনে খুলিয়া সে ধন
দেখিবো সাক্ষাতে।

খুলবে কেনো সে ধন তার গ্রাহক বিনে।
মুক্তা মণি রেখেছে ধনী, বাঁধাই করে যে দোকানে।

সাঁই আমার কখন খেলে কোন খেলা
জিহবার কি সাধ্য আছে গুনে পড়ে তাই বলা।

সাঁই আমার কখন খেলে কোন খেলা
জিহবার কি সাধ্য আছে গুনে পড়ে তাই বলা।

আমার দেখে শুনে জ্ঞান হলো না
কি করিতে কি করিলাম,
দুদ্ধেতে মিশালাম চনা।


মিছে মায়ায় মদ খেয়ো না


প্রাপ্ত পথ ভূলে যেয়ো না


এবার গেলে আর হবে না
 

পরবি কয় যুগের পিছে।


পাড়ে কে যাবি নবীর নৌকাতে আয়
 

রপ কাস্থের নৌকা খানি নাই ডুবার ভয়।
 

বেচারা নাইয়ে যারে
 

তুফানে যাবে মারা
 

এক ধাক্কায়।


মানুষ তত্ত্ব যার সত্য হয় মনে;
সে কি অন্য তত্ত্ব মানে।

এ সব দেখি কানার হাট বাজার।
ভেদ বিধি সব শাস্ত্র কানা যদি কানা মন তোমার।
পন্ডিত কানা অহংকারে নেতা কানা স্বার্থে ভরে
সরকার কানা অজ্ঞ ভারে সে মানে না কোনো আচার।
এক কানা কয় আর এক কানারে চলো দেখি যাই ভব পারে
নিজেই কানা পথ চিনে না পরকে ডাকে বারম্বার।
কানা কানা ধলা মেলা বোবাতে খাই রসগোল্লা
লালন তেমনি মদনা কানা ঘুমের ঘোরে দই বাহার।

যখন ভিটায় হা বসতি
দিয়া এলে খোস কবলুতি
হৃদামে নাম রাখবো স্থিতি, ভুলেছো কিরে।
আইন মাফিক নিরিখ দেনা
তাতে কেনো ইতরপনা?
দিন যাবে রে যাবে রে জানা, জানা যেবে আখেরে।

না হলে মন সরল কি ফাল হবে কথা ধরে।
হাটে হাটে বেরাও মিছে তওবা পড়ে।
মন যার হয়েছে খাঁটি, মুখে যদি গলদ পড়ে;
খোদা তাতে নারাজ নয়রে, লালন ভেরে।

চাঁদ ধরা ফাঁদ জানো না মন।
নেহার নাই তোমার লাফালাফি সার।
এক লাফ দিয়ে ধরতে চাও গগণ।

কি করিতে এসে ভবে কি কর্ম সবে করিলো
লালন বলে সকল আমার যজ্ঞের ঘি কুত্তায় খেলো।

তুমি সহজে কি সই হবা?
চির দিন ইচ্ছা মনে
আইল ডিঙ্গায়ে ঘাস খাবা?
দাবার পর মুগুর পলে
সেই দিনে গা তার পাবা।

তোমরা সব খলিফা 'লে, যে যা বুঝে দিও বলে।
অসৎ অভক্ত জনা, গুপ্ত ভেদ তারে বলো না
বলিলেও সে মানিবে না, করবে অহঙ্কারী।
নেকতন বান্দারা যত, বেদ পড়ে আউলিয়া হতো
নাদানেরা শুল চাছিতো, মনছুর তার সাবেদ আছে।

No comments:

Post a Comment